পিংক সল্ট অথবা হিমালয়ান পিংক সল্ট বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়। বাংলাদেশের সর্বস্তরের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এই লবণ খাওয়ার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। কারণ এই লবণে মানব দেহের জন্য উপকারী এমন অনেক উপাদান রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার ও এখন পিংক সল্ট খাওয়ার জন্য মানুষকে সাজেস্ট করে।
কিন্তু পিংক সল্ট কি, কেন পিঙ্ক সল্ট খাওয়া উচিত, এই লবণ কাদের জন্য উপকারী, কিভাবে খেতে হয়, কোথায় কিনতে হয়, পিঙ্ক সল্টের আসলে দাম কত এই ব্যাপারগুলো অনেকের অজানা।
আমরা আজকে এই সব বিষয়ে জানার চেষ্টা করব। পিঙ্ক সল্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে হলে অবশ্যই আমাদের পুরো আলোচনা করতে হবে। তাহলে দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

পিংক সল্ট কি?
পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলে পাওয়া বিশেষ এক ধরনের লবন হচ্ছে পিঙ্ক সল্ট। এগুলো সমুদ্র থেকে উত্তোলন করা হয় না বরং খনি থেকে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় লক্ষ লক্ষ বছর আগে হিমালয়ের পাদদেশে সমুদ্র ছিল। সেখানে হিমালয় পর্বত গড়ে ওঠার ফলে নিচে থাকা পানি বিশেষ প্রক্রিয়ায় লবণে পরিণত হয়েছে।
এই লবণ অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং এর মধ্যে প্রায় ৮৪ ধরনের খনিজ উপাদান রয়েছে। এর প্রত্যেকটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। হিমালয়ের পাদদেশে পাওয়া যায় বলে অনেকে এর নাম হিমালয়ান লবণ বলে ডাকে। আবার অনেকে এর মধ্যে থাকা গোলাপি আভার কারণে একে পিংক সল্ট বলে।
কেন পিঙ্ক সল্ট খাওয়া উচিত?
সাধারণ লবণের চেয়ে পিঙ্ক সল্টে বেশি পরিমাণে খনিজ উপাদান থাকায় ডাক্তাররা এই লবণ খাওয়ার জন্য মানুষকে বলে। এই লবণের অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। সেগুলোই এখন আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
১. খনিজ সমৃদ্ধতা
পিঙ্ক হিমালয়ান লবণকে সাধারণ লবণের চেয়ে পুষ্টিকর বলে মনে করা হয় কারণ এতে উপস্থিত পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সাহায্য করে। এই খনিজগুলো দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কার্যকর।
২. ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা
শরীরের তরল ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিঙ্ক লবণ শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করে, যা স্নায়ু সংকেত প্রেরণ এবং পেশীর কার্যক্রমকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। এটি বিশেষ করে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হলে পুনরায় ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
৩. শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নতি
সল্ট থেরাপি (হ্যালোথেরাপি) শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাগুলো উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এই থেরাপিতে পিঙ্ক হিমালয়ান লবণের খনিজ সমৃদ্ধ বায়ু শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে ফুসফুসের ভেতর থেকে মিউকাস পরিষ্কার হতে সাহায্য করে। এটি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যাগুলো কমাতে পারে।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
পরিমিত পরিমাণে পিঙ্ক লবণ গ্রহণ করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। যাদের রক্তচাপ সব সময় কম থাকে তারা নিয়মিত তবে পরিমিত পরিমাণে এই লবণ গ্রহণ করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে রক্তচাপ বাড়তে পারে, তাই পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
৫. হজমে সহায়তা
পিঙ্ক লবণ হজমশক্তি উন্নত করতে পারে। এটি পিত্ত এবং পাচক রস উৎপাদনে সহযোগিতা করে, যা খাবার সহজে ভেঙে ফেলে এবং পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। কিছু লোক খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে সামান্য পিঙ্ক লবণ মিশিয়ে পান করলে হজমশক্তি বাড়ে বলে বিশ্বাস করেন।
এছাড়াও এই লবণের আরো অসংখ্য গুণাবলী রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করে। পিঙ্ক সল্ট শুধু খাবার হিসেবে নয় বহির্বিশ্বে এই লবণ ব্যাবহার করে মানুষ ঘরে আগুন জ্বালায় যাতে করে ফুসফুস ভালো থাকে।
হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট এর স্বাস্থ্যের গুণাবলী অন্য কোন আলোচনায় আরো বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশে পিঙ্ক সল্টের দাম কত?
বাংলাদেশে সাধারণত পিঙ্ক সল্ট বিক্রি করে অর্গানিক ফুড বিক্রেতারা। ফেসবুকের মাধ্যমে মার্কেটিং করে তারা বিক্রি করে। এখানেই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আসল নকলের ঝামেলা থাকায় অনেকে নিজেদের পিংক সল্ট কে অরজিনাল এবং প্রিমিয়াম কোয়ালিটি বলে দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
তবে পাঞ্জাব থেকে আমদানি কারক অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পিঙ্ক সল্ট প্রকারভেদে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি হতে পারে।
এই দামের পরিবর্তন হতে পারে এই লবণের কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে। তবে অনেকেই এর দাম বাড়িয়ে ৮০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। তারা মূলত প্রতারক। হয়তো তাদের পণ্যটা ভালো তবে পিং সল্ট কোনভাবেই ৮০০ টাকা বা ১৩০০ টাকা কেজি না। সুতরাং কেনার সময় অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।
আপনি চাইলে পিঙ্ক সল্ট আমাদের ওয়েবসাইট থেকেও কিনতে পারেন। কোয়ালিটি অন্যদের চেয়ে ভালো এবং দাম অন্যদের চেয়ে কয়েক গুণ কম। কেনার আগে অবশ্যই আপনি মার্কেটের দাম যাচাই করে কিনতে পারেন।